সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ ইউনিয়নের নলসোন্দা বাজারে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি মার্কেটের ৩৮টি দোকান পাঁচ দিন ধরে জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের দাবি, দোকান খুলতে না দিয়ে বারবার চাঁদার দাবি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে সব অভিযোগই অস্বীকার করা হয়েছে।
ঘটনাটি অবস্থিত নলসোন্দা নতুন বাজার এলাকায়, যেখানে কয়েকজন মালিক তাদের নিজস্ব জমিতে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। এসব অভিযোগ জানিয়ে ব্যবসায়ীসহ ক্ষতিগ্রস্তরা ইতোমধ্যে উল্লাপাড়া মডেল থানাতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নলসোন্দা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত মার্কেটে গত ৪ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির শরিফুল ইসলাম সাহাদ (Shariful Islam Sahad), জামায়াত নেতা ও সাবেক মেম্বার মোক্তার হোসেন মোল্লা এবং আল-আমিন মোল্লাসহ প্রায় ৪০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মার্কেটে আসে। তারা প্রথমে সাইফুলের কাছে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে, পরে মার্কেটের অন্য দোকানিদের কাছেও একই দাবি তোলে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাইফুলকে মারধর করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বাজারের সব দোকান বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
হুকুম পেয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মো. গিয়াসকেও এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর ৩৮টি দোকান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি হুমকি দিয়ে বলা হয়—কেউ দোকান খুললে লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হবে।
হামলার শিকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে পরোটার দোকান চালাই। হঠাৎ এসে তারা জানতে চায়—আমি বিএনপির পোস্টার লাগিয়েছি কেন। তারা বলে, এই গ্রামে বিএনপির “ব” থাকবে না, এখানে শুধু জামায়াত থাকবে। দোকান বন্ধ করে দিয়ে হুমকি দেয়—দেখি তোকে কে রক্ষা করে।’ তিনি আরও জানান, অতর্কিত হামলার সময় তার বাবা দোকানে ছিলেন, তখন তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। অভিযোগ করার পর শনিবার সন্ধ্যায় আবারও মহড়া দিয়ে এসে ভয়ভীতি দেখায়। ফলে টানা কয়েক দিন ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন।
মার খাওয়া গিয়াস উদ্দিন বলেন, এর আগেও ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্থানীয় এক ক্লাবের জায়গায় থাকা পুরোনো মার্কেটে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। সেই জায়গায় ব্যবসা করতে নিষেধ করায় পরে তারা সাইফুলের ব্যক্তিগত মার্কেটে দোকান দেয়। কিন্তু এখন নতুন মার্কেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সলপ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক দিন আগে জানতে পারেন, তার এক ভাড়াটিয়া সাইফুলের কাছে জামায়াতের লোকজন চাঁদা দাবি করেছে। তিনি বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর আমরা দোকানপাটের সামনে গেলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এরপর থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ দু’পক্ষকেই ডেকে কথা বলে দোকানপাট খুলতে বলে। কিন্তু সেদিন রাতেই আবারও হুমকি দেওয়া হয়।’ ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারিকে বিষয়টি জানালে তিনি নাকি বলেন—‘ওরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
এই অভিযোগে মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও জামায়াতের ওয়ার্ড আমির শরিফুল ইসলাম সাহাদ ফোন ধরেননি। তাঁর বড় ভাই জামায়াত নেতা ও সাবেক সদস্য মোক্তার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘এ গ্রামের ১৪ আনা মানুষ জামায়াতকে সমর্থন করে।’ তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন—দোকানিরাই নিজেরা ভাঙচুর করে জামায়াতের নামে মামলা দিয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহজাহান আলীর মোবাইলেও বহুবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম আকবর আলী (M Akbar Ali) বলেন, ‘ব্যক্তিগত মার্কেট বন্ধ করতে জামায়াত কেন যাবে? তারা অবৈধভাবে দোকান বন্ধ করিয়েছে।’ তাঁর মতে, স্থানীয় জামায়াত প্রার্থী ও প্রভাবশালী রফিকুল ইসলামের নির্দেশ বা ইন্ধন ছাড়া এ ঘটনা ঘটতে পারে না।
ঘটনার বিষয়ে সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) মো. … জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি মীমাংসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দোকানপাট খুলতে বলা হয়েছে।


