বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত হামলার ফলে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) ভিত্তিক ফেডারেল সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং তাদের মন্দিরের ওপর হামলার পরিমাণ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদ্য প্রকাশিত এই মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ’ নিহত হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ওইসব হত্যাকাণ্ড ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং, ওগুলো রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে।”
শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ও শারীরিক আক্রমণ ও সম্পত্তি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উপরেরগুলো সহ অন্যান্য ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঠিক-ই। কিন্তু “প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে থাকে।”
তবে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কর্মকর্তা শফিকুল আলম এই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রমাণ নেই।
এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর বক্তব্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে না এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর শত শত হিন্দুর মৃত্যুর দাবী একেবারেই মিথ্যা।
ওই সময়ে প্রায় কোনও হিন্দু বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউই এ ধরনের সহিংসতার শিকার হননি জানিয়ে ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
তাদের মতে, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এতে দেখা গেছে যে অধিকাংশ ঘটনাই ধর্মীয় সহিংসতার কারণে ঘটেনি। বরং, এগুলো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে হয়েছিলো — এমনটাই জানানো হয়েছে প্রেস উইং এর পক্ষ থেকে।
মার্কিন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। তবে, বাংলাদেশকে ‘বিশেষ উদ্বেগের তালিকা’ বা ‘নজরদারিতে থাকা’ দেশগুলোর মধ্যে রাখা হয়নি।
বিশেষ উদ্বেগের তালিকায় রয়েছে চীন (China), ভারত (India), পাকিস্তান (Pakistan), মিয়ানমার (Myanmar), আফগানিস্তান (Afghanistan), রাশিয়া (Russia), সৌদি আরব (Saudi Arabia), উত্তর কোরিয়া (North Korea) ও ইরান (Iran) সহ আরও কয়েকটি দেশ।
এছাড়া, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কারণে বিশেষভাবে নজরদারিতে রাখা উচিত এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka), তুরস্ক (Turkey), ইন্দোনেশিয়া (Indonesia) এবং মিশর (Egypt)।
প্রতিবেদনে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ (RAW) এবং বিকাশ ইয়াদবের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। একইভাবে, পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।