সংস্কার কমিশনের ৬৯১টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৫০০টিরও বেশি সুপারিশে একমত, ৭৩ টিতে আপত্তি বিএনপির

পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কার কমিশনের মোট ৬৯১টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৫০০টিরও বেশি সুপারিশে একমত হয়েছে বিএনপি (BNP)। তবে ৭৩টি প্রস্তাবে দলটি স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed)।

বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপি জানায়, তারা রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় বিচার বিভাগকে যুক্ত করতে চায় না। দলটি চায় না রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব এককভাবে কোনো জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির হাতে থাকুক। পরিবর্তে প্রবীণ তিন সদস্যের একটি প্যানেল থেকে একজনকে বাছাই করে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোসহ অভিশংসন প্রক্রিয়ায় দুই কক্ষীয় পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের বিধান চান তারা।

এছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রশ্নে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)কে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছে বিএনপি। সংসদকে দুই কক্ষে বিভক্ত করার পক্ষে দলটি—উচ্চকক্ষ হবে ‘সিনেট’, আর নিম্নকক্ষ ‘পার্লামেন্ট’ নাম ধারণ করবে বলে মত জানিয়েছে।

**প্রতিটি কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপির অবস্থান

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে বিএনপি ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক একমত, ১১টিতে একমত নয়, এবং ৫টিতে মন্তব্যসহ মত দিয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি প্রস্তাবে কেবল ১৯টিতে সরাসরি একমত হয়েছে দলটি। বাকিগুলোতে দ্বিমত বা মন্তব্য রয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে একমত হয়েছে বিএনপি। ৬৪টিতে মন্তব্যসহ একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, এবং ২৪টিতে দ্বিমত পোষণ করেছে।

দুদক (ACC) সংস্কার কমিশনের ২০টি প্রস্তাবে ১১টিতে একমত, ৮টিতে একমত নয়, আর একটি সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৮টি চ্যাপ্টারের ৮৯টি প্রস্তাবে ৬২টিতে একমত হয়েছে বিএনপি, ৯টিতে মন্তব্যসহ একমত এবং ১৮টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি সচিবালয় চাই, এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কোর্টের অন্তর্গত একটি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।”

তিনি আরও জানান, বিচারকদের বয়সসীমা ৭০ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগের মধ্যে দুর্নীতির হিসাব রাখা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও আগ্রহী দলটি।

সর্বমোট, বিএনপি নিজেদের অবস্থানকে যুক্তিনির্ভর ও নীতিগত বলে অভিহিত করেছে। তারা মনে করে, এসব সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *