দীর্ঘ আন্দোলন ও অনশন শেষে অবশেষে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা চত্বরে পতাকা উড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষক সমিতি এই পদত্যাগকে ন্যায়বিচারের পরাজয় বলে আখ্যায়িত করেছে।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতি অনুযায়ী, ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করে এইভাবে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি ভুল বার্তা দিচ্ছে। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম একটি রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, অথচ যাদের মুখে রাজনীতিমুক্তির কথা শোনা গিয়েছিল, তারাই আজ অন্ধকার রাজনীতির শিকার।”
তারা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় তদন্ত ছাড়া ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগকে চাপের ফসল হিসেবে দেখছে শিক্ষক সমাজ। ড. ফারুক হোসেন আরও বলেন, “১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।”
অন্যদিকে পদত্যাগের পটভূমিতে উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম এক আবেদনপত্রে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পর তাঁকে এই পদে নিযুক্ত করা হয়। দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেছেন তিনি, তবে উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনো প্রশাসনিক বা আর্থিক সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ তোলেন।
এদিকে বুধবার রাত ১টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কুয়েটের চলমান সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত চালু করার লক্ষ্যে ভিসি ও প্রোভিসিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) প্রতিনিধি দল শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙায়। মুহূর্তেই ক্যাম্পাসে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে।
এই নাটকীয় সমাপ্তির পেছনে থেকে গেছে অমীমাংসিত কিছু প্রশ্ন—বিশেষত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটি, যা শিক্ষক মহলে এখনও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।