বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পুনরুদ্ধারে আপিল বিভাগে দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছে। আজ রবিবার সকালে ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী দলটির পক্ষে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইতিমধ্যেই জামায়াতের আপিল শুনানি শুরু হলেও অজানা কারণে তা হঠাৎ স্থগিত হয়ে যায়। দলটির নিবন্ধন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এ মামলার রায়ের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দ্রুত শুনানি অত্যন্ত জরুরি বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জানায়, এই বিষয়টি আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার শুনানির তালিকায় আসতে পারে।
এর আগে, চলতি বছরের ১২ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছিল। গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ জামায়াতের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে শোনার সিদ্ধান্ত দেয়, যা দলটির নিবন্ধন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার আইনি পথ খুলে দেয়।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত প্রদান করে। জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজম।
এরও আগে, ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে আনার আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য করে। ওইদিন শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রিট মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে অবৈধ ঘোষণা করে তাদের নিবন্ধন বাতিল করেন। প্রায় পাঁচ বছর পর, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর জামায়াত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
তবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে দলটির প্রধান আইনজীবী শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল খারিজ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থেকে যায় এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকে।
পাশাপাশি, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে মাত্র ২৭ দিন পর, ২৮ আগস্ট সরকার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াত ও শিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।