জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট অনিশ্চিত ও সহিংস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬২৬ জন ব্যক্তি প্রাণ বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার আইএসপিআর (ISPR) থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী স্পষ্ট ভাষায় জানায়, মানবিক দায়বদ্ধতার কারণেই তখন আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ (Police) কর্মকর্তা ও সদস্য, ৫১ জন স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্য এবং ১২ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ। মূলত আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ের আগে তাদের জীবন রক্ষা করাকেই সেনাবাহিনী গুরুত্ব দিয়েছে।
উল্লেখ্য, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি অফিস ও থানা আক্রান্ত হয়, রাজনৈতিক কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়, এবং তখন অনেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, এদের মধ্যে বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী এক-দুই দিনের মধ্যে নিজ ইচ্ছায় সেনানিবাস ত্যাগ করেন। তবে পাঁচজনকে তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা বা অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে ১৮ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর সেনানিবাসে অবস্থানকারীদের একটি প্রাথমিক তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানায়। এবার সেই প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত হিসেবে উল্লেখ করে ৬২৬ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সেই সময় যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা কেউই দীর্ঘমেয়াদে সেনানিবাসে অবস্থান করেননি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত মানবিকতার নিরিখে নেওয়া হয়েছিল, যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জরুরি ও ন্যায়সঙ্গত ছিল।
তবে সেনাবাহিনী অভিযোগ করে, কিছু ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং জনগণের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই এসব অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army) দেশ ও জাতির নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষায় পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং এই প্রতিশ্রুতি আগামীতেও বজায় থাকবে।










