সংকট সমাধানে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও আলোচনা করেছে , সমাধানে মধ্যস্থতা করেছে জামায়াত

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সরব ভূমিকা পালন করেছে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami)। দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সঙ্গেও আলোচনা করেছে দলটি। রোববার যুগান্তরকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সমস্যার সমাধান একান্তভাবে দরকার, এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।”

তিনি বলেন, “সংকট বাস্তবের চেয়ে বেশি ছিল সন্দেহনির্ভর এবং আস্থাহীনতায় ভরা। মূলত চারটি পক্ষ এই সংকটে যুক্ত ছিল—অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government), সেনাবাহিনী (Army), বিএনপি (BNP) ও এনসিপি (NCP)।”

জামায়াতের মতে, সংকট আরও ঘনীভূত হতো যদি এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতেন। এতে নির্বাচন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ত বলেই দলটির বিশ্বাস। “আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু নার্ভাস হইনি। বিশ্বাস করেছি, এই পরিস্থিতিরও সমাধান আছে। সেই চিন্তা থেকেই আমরা দ্রুত উদ্যোগ নিই এবং বিএনপি, এনসিপি ও ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করি,” বলেন ডা. তাহের।

তিনি আরও জানান, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাপ্রধানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি যাতে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি দূর হয় এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান উঠে আসে।” বিশেষত সেনাবাহিনীর মধ্যে কিছু সংশয় তৈরি হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে এবং সরকারের সঙ্গে তাদের অবস্থান নিয়ে—যা জামায়াত আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের চেষ্টা করেছে।

সংকটের মূল কারণ হিসেবে তিনি দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করেন—নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা না হওয়া এবং এই ইস্যুতে পক্ষগুলোর মধ্যে জেদাজেদি। কেউ চাইছে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হোক, কেউ আবার নির্দেশনাভিত্তিক কাজ করতে রাজি নয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করে জামায়াত বলেছে, “নির্বাচন দেওয়া আপনার দায়িত্ব। তবে কবে ও কীভাবে সেটা হবে, সেটা স্পষ্ট করতে হবে। এমনকি সংস্কারের বিষয়েও একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দরকার।”

ডা. তাহের জানান, সেনাবাহিনীর মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে এবং তারা চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। “সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এ দেশের মানুষ। তারাও এই নির্বাচনের অংশীদার। তবে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে ধৈর্য ধরে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়েছি,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “রাজনীতিতে অনমনীয়তা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই মিলে আলোচনার মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি করা সম্ভব। এক মাস আগে বা পরে হলেও মানুষ গ্রহণ করবে যদি সেটা যৌক্তিক ও স্বচ্ছ হয়।”

সংকট থেকে উত্তরণে এই আন্তঃপক্ষীয় মধ্যস্থতা ও আলোচনার ভূমিকা রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা দিয়েছে। জামায়াত এখন আশাবাদী, দেশ আবারও নির্বাচনের পথে ফিরবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *